এটাই ফুটবল

Spread the love

BANNERবাংলা সংলাপ ডেস্কঃআরো একবার শেষের নাটকীয়তা উপভোগ করলেন ফুটবলপ্রেমীরা। আর ৭৯ বছরের পুরনো এক রেকর্ড ভেঙে দিলেন হ্যারি কেইন। মস্কোয় ১-০ গোলে এগিয়ে ইংল্যান্ড সমর্থকরা তখন ম্যাচের শেষ বাঁশির অপেক্ষায়। কিন্তু ম্যাচের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে গোল নিয়ে সমতায় ফেরে কলম্বিয়া। গতরাতে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের লড়াই শেষে ১-১ স্কোর নিয়ে খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। আর টাইব্রেকারে জয় নিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কাটে ইংলিশরা।
তৃতীয় স্পট কিকে জর্ডান হেন্ডারসনের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন কলম্বিয়ান গোলরকক্ষক ওসপিনা। পরে কলম্বিয়ান তারকা উরিবের শট প্রতিহত হয় পোস্টে। কার্লোস বাঁকার শট গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড রুখে দিলে সুযোগ আসে ইংলিশদের সামনে। আর শেষ শটে গোল নিয়ে সমর্থকদের আনন্দে ভাসান থ্রি লায়ন তারকা এরিক ডায়ার। আগামী ৭ই জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ সুইডেন । শেষ ষোলো রাউন্ডের অপর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ী হয় সুইডিশরা।
৭৯ বছরের পুরনো এক রেকর্ড ভেঙে দিলেন হ্যারি কেইন। আর জয় নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে স্বপ্ন দীর্ঘ হলো ইংলিশদের । মস্কোয় পেনাল্টি থেকে ম্যাচের প্রথম গোল আদায় করেন হ্যারি কেইন। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে কেইনের সামনে ছিল গর্বের ৭৯ বছরের পুরনো এক রেকর্ডের হাতছানি । ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে গোল নিয়ে তা পূরণ করেন হ্যারি কেইন। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে এ নিয়ে টানা ছয় ম্যাচে গোল পেলেন এ ইংলিশ স্ট্রাইকার। টানা ৬ ম্যাচে গোলের নজির ছিল না ইংল্যান্ডের কোনো খেলোয়াড়ের। এর আগে ১৯৩৯ সালে জাতীয় দলের হয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে গোলের রেকর্ড গড়েন ক্ল্যাসিক্যাল যুগের ইংলিশ তারকা টমি লটন।
মস্কোয় ডেলে আলি, অ্যাশলি ইয়ং, জেসে লিংগার্ড ও জর্ডান হেন্ডারসনের বোঝাপড়ায় মাঝমাঠে দখল নিয়ে খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড। যদিও পুরোপুরি ফিট মনে হয়নি টটেনহ্যামের তরুণ তারকা ডেলে আলিকে। শুরুর ৯ মিনিটে দু’বার কর্নার ও একবার ফ্রি কিক আদায় করে ইংল্যান্ড। তবে এ সময় পরীক্ষা দিতে হয়নি কলম্বিয়ার আর্সেনাল গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনাকে। ১৬তম মিনিটে ম্যাচে প্রথমবার পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করে ইংল্যান্ড। ডানপ্রান্ত থেকে কিয়েরন ট্রিপিয়ারের ক্রসে হ্যারি কেইন হেড নিলে বল বার উঁচিয়ে বাইরে যায়। ৩৮তম মিনিটে নিজেদের ডি বক্সের মাথায় হ্যারি কেইনকে ফাউল করেন কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার। তবে বাম পোস্টের বাইরে যায় ট্রিপিয়ারের শট। আর ফ্রি-কিকের আগে ইংলিশ তারকা হেন্ডারসনকে মাথা দিয়ে আঘাত করার দায়ে হলুদ কার্ড দেখেই পার পান কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার উইলমার বারিওস। চলতি আসরে এটি ছিল তার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড। ২০ বছর আগে বিশ্বকাপে ঠিক এই পজিশন থেকেই কলম্বিয়ার বিপক্ষে ফ্রি কিকে গোল আদায় করেছিলেন ডেভিড বেকহ্যাম। অন্যদিকে রয়েসয়ে খেলা শুরু করে কলম্বিয়া। ম্যাচে প্রথমবার তারা প্রতিপক্ষ গোলপোস্টে অনটার্গেটে শট নেয় প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে। তবে ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডের গ্রিপে আশ্রয় নেয় হুয়ান কুয়েনতেরোর শট। প্রথমার্ধে ৫৫% বলদখল নিয়ে প্রতিপক্ষ গোলবারে ৮ বার শট নেয় ইংলিশরা। তবে অনটার্গেটে ছিল মাত্রই একটি।BANNER
৫২তম মিনিটে অ্যাশলি ইয়ংয়ের বিপজ্জনক লব কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বারিওস। তবে কলিম্বিয়ানদের পুরো রক্ষা হয় না তাতে। কর্নার কিকে বল কলম্বিয়ার ডি বক্সে উড়ে আসার মুহূর্তে ডি বক্সে ধ্বস্তাধ্বস্তিতে হ্যারি কেইনকে মাটিতে ফেলে দেন কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার কার্লোস সানচেজ। আর পেনাল্টির বাঁশি বাঁজিয়ে সানচেজকে হলুদ কার্ড দেখান ম্যাচের মার্কিন রেফারি মার্ক গিজার । ম্যাচের শেষ দিকে মুহুর্মুহু আক্রমণে ইংল্যান্ড ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত রাখে কলম্বিয়া। এতে ফলও পেয়ে যায় তারা। মেজাজ হারিয়ে ছয় হলুদ কার্ড দেখা কলম্বিয়ানরা বড় সুযোগ নষ্ট করে ম্যাচের ৮২তম মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে অধিনায়ক রাদামেল ফ্যালকাওয়ের দেয়া দারুণ পাসের বল গোলবার উঁচিয়ে বাইরে মারেন জুভেন্টাস তারকা হুয়ান কোয়াদরাদো। আর ৮৬তম মিনিটে বার উঁচিয়ে যায় ফ্যালকাওয়ের হেড। ২ মিনিট পর আরেক সুযোগে ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ডের হাতে আশ্রয় নেয় ফ্যালকাওয়ের দুর্বল শট। ইনজুরি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড উরিবের শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ইংলিশ গোলরক্ষক। কিন্তু পুরো রক্ষা হয় না ইংল্যান্ডেরও। কর্নার থেকে পাওয়া সুযোগে দারুণ হেডে গোল নিয়ে কলম্বিয়াকে সমতায় ফেরান এফসি বার্সেলোনা ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনা। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। চলতি বিশ্বকাপে এটি তার তৃতীয় গোল। অতিরিক্ত সময়ে সতর্ক ফুটবল খেলে দু’দলই। আর শেষ পাঁচ মিনিটে একাধিক সুযোগ তৈরি করেও গোলবঞ্চিত থাকে ইংল্যান্ড।
আসর শুরুর আগে শিরোপা জয়ের প্রশ্নে নীরিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রেসনোটের বিচারে ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা ছিল মাত্রই ৪%। গ্রুপে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে জয়ে তা উন্নিত হয় ৬%-এ। আর নকআউটপর্বের টিকিট কাটার পর ৭%-এ বেড়ে দাঁড়ায় তা। আসরের শুরুতে গ্রেসনোটের নীরিক্ষায় কলম্বিয়ার পক্ষে এমন সম্ভাবনা ছিল ৫%। তবে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে জাপানের কাছে ২-১ গোলের হারে তা ২%-এ নেমে যেতে দেখেছিল কলম্বিয়ানরা।
কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৬ সাক্ষাতে অপরাজিত রইলো ইংল্যান্ড। আর সর্বশেষ সাক্ষাতে ২০০৫-এ নিউ জার্সিতে মাইকেল ওয়েনের হ্যাটট্রিকে ৩-২ গোলে জয়ের স্মৃতি ছিল ইংলিশদের। বিশ্বকাপে দু’দলের একমাত্র লড়াইয়ে ১৯৯৮’র আসরে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ড্যারেন অ্যান্ডারটন ও ডেভিড বেকহ্যামের গোলে ২-০ গোলে জয়ী হয় ইংল্যান্ড। তবে ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে আর্জেন্টাইন কোচ হোসে পেকারম্যানের অধীনে উজ্জ্বল পরিসংখ্যান কলম্বিয়ার। ২০১২ থেকে এমন আগের ৮ ম্যাচের ৬টিতে জয় দু’বার ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে কলম্বিয়ানরা। বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে ইংলিশদের স্মৃতি খুব সুখের নয়। শেষ আট নকআউট ম্যাচের মাত্রই দুটিতে জয় দেখে ইংলিশরা। বিশ্বকাপে শুরুর দুই ম্যাচে সাকুল্যে ১৫৩ মিনিট খেলে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক পাঁচ গোলের কৃতিত্ব হ্যারি কেইনের। চলতি আসরের গ্রুপ পর্বে শুরুর দুই ম্যাচে হ্যাটিট্রকসহ ৫ গোল পান এ ইংলিশ স্ট্রাইকার। আসরে সর্বোচ্চ ৬ গোলের কৃতিত্ব কেইনেরই। আসরে বেলজিয়ান স্ট্রাইকার রমেলু লুকাকু ও পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পেয়েছেন সমান চার গোল বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে সর্বাধিক ১০ গোলের রেকর্ড গ্যারি লিনেকারের।


Spread the love

Leave a Reply