পাথরখেকো শামীমকে সঙ্গে নিয়ে সমাবেশে এমপি ইমরান আহমদ

Spread the love

sylhet_63174_1510346108সিলেট অফিসঃ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও পরিবেশ অধিদফতরের আলোচিত মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি ‘পাথর রাজ্যের লর্ড’ শামীম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সভা-সমাবেশ করলেন স্থানীয় এমপি ইমরান আহমদ। এলাকায় পাথরখেকোদের গডফাদার হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী ও বিতর্কিত এ আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে একজন আইন প্রণেতার ঘোরাফেরায় বিস্মিত-উদ্বিগ্ন স্থানীয় আইনজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও পরিবেশবিদরা। পাথরখেকো সিন্ডিকেটের সর্দার ও আইন ভঙ্গকারীকে নিয়ে এমপির ভূমিকার পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন তারা।

গত মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদফতরের করা মামলার প্রধান আসামি করা হয় শামীম মিয়া ওরফে পাথর শামীমকে। মামলায় ১০২ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগের ব্যাপারে সিলেটের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মিশকাতুন্নুর বলেন, যে ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা যায়। পরিবেশ অধিদফতরের তদন্তকারী কর্মকর্তা বা পুলিশ চাইলেই তা করতে পারে।

জানতে চাইলে সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পাথর লুট, পরিবেশ ধ্বংসের দায় কোনোভাবেই স্থানীয় এমপি এড়াতে পারেন না। নানা অপকর্মের হোতা, চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে একজন আইন প্রণেতা যদি প্রশাসনের সামনে, জনসমক্ষে চলেন এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও সুশাসনের জন্য হুমকি। এমন কর্মকাণ্ডের পরিণাম শুভ নয়। সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আইন প্রণেতাদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কঠোর হোন।

এ ব্যাপারে এমপি ইমরান আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করেছেন, যারা উদ্বিগ্ন তারা তো আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমার অনেক প্রতিক্রিয়া আছে, তবে যাই হোক আমি ফোনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেই না।

বিশিষ্ট আইনবিদ ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, একজন আইন প্রণেতা যাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন তিনি সরকারেরই বিভিন্ন সংস্থার দায়ের করা মামলার আসামি। এটা আইনের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। এ ব্যাপারে প্রশাসনকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। কারণ পুলিশ প্রশাসন শপথ ও দায়িত্ব পালনে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। একজন আইন প্রণেতা হয়ে পরিবেশ ধ্বংসের শীর্ষস্থানীয় অভিযুক্তকে নিয়ে ঘোরাফেরা করে পরিবেশ রক্ষায় আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, আইন প্রণেতা যদি একজন চিহ্নিত অপরাধীকে নিয়ে ঘোরেন সেটা সুশাসনের জন্য চরম হুমকি। সাধারণ মানুষ মনে করবে ওই এলাকায় যেন আইন নেই। প্রশাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পুলিশ রাষ্ট্র নয়, যেন নেতার চাকরি করেন। প্রশাসন অবৈধ সুবিধা নেয়ায় তাদেরও নৈতিক মনোবল নেই। তাই একাধিক মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পারছে না।

বেলা সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার বলেন, আইন প্রণেতার সঙ্গে কোনো চিহ্নিত অপরাধী ঘুরলে ওই এমপিকে আশ্রয়দাতা হিসেবে প্রশাসন, মানুষ মনে করবে। পরিবেশ ধ্বংসকারীদের যদি আইন প্রণেতাই প্রশ্রয় দেন তাহলে পরিবেশ রক্ষায় উচ্চ আদালত তথা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনা সুদূরপরাহত হবে।

সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের মামলা তারাই তদন্ত করে থাকেন। আদালতে চার্জশিট জমা হলে আদালতই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তবে সুস্পষ্ট অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদেরকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, পরিবেশের মামলা ছাড়া অপর মামলাগুলোতে শামীম জামিনে রয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুর রহমান খান বলেন, পরিবেশের মামলার তদন্ত, আসামি গ্রেফতারে পুলিশের এখতিয়ার নেই, যা করার পরিবেশ অধিদফতরই করবে।

শুক্রবার দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গরিব কৃষকদের মধ্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় এমপি ইমরান আহমদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাথরখেকোদের সর্দার শামীম। অনুষ্ঠানের আগে ও পরে সব সময় তাকে দেখা গেছে এমপি ইমরানের পাশে। বিকালে কলাবাড়ি এলাকায় অনুষ্ঠিত যুবলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি ইমরান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন শামীম।

মঙ্গলবার সিলেটের পাথরখেকো সিন্ডিকেটের সর্দার, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম মিয়াকে প্রধান আসামি করে পরিবেশ ধ্বংসের দায়ে ২২ জন পাথরখেকোর নামোল্লেখ করে মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলা করেন পরিবেশ অধিদফতর সিলেটের সহকারী পরিচালক পারভেজ আহম্মেদ।

মামলার এজাহারে অভিযুক্তরা হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান বাছির মিয়ার ছেলে শামীম মিয়া, বিলাল মিয়া, গরিব উল্লাহ, করিম উল্লাহ, আতাউর রহমান শাহাবুদ্দিন, আমির উদ্দিন, আইয়ুব আলী, আঞ্জু মিয়া, মো. ইলিয়াস আলী রাসা, কেফায়েত উল্লাহ, মাহমুদ হোসেন ওরফে মছন হাজী, বশর মিয়া, কালা মিয়া, আবদুুল হান্নান, মানিক মিয়া, আলী নূর, মামুন চৌধুরী, কাওছার আহমদ, নুরুল আমির ওরফে বম, লতিফ, শায়েস্তা মিয়া। মামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে শামীম মিয়ার বাহিনীর সদস্যরা। এতে শত শত যানবাহন সড়কে আটকা পড়ে। পাথ তুলতে গিয়ে বহু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় এলাকায় এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ১০ মাসে শুধু শাহ আরেফিন টিলাতেই মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ শ্রমিক।

 


Spread the love

Leave a Reply