ফারাবী র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

Spread the love

farabiনাজমিন রিয়া, বাংলাদেশ:
ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার মূল সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে আটক করেছে র‌্যাব। আজ সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ফারাবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন ।
পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে এখনি সবকিছু জানানো যাবে না।
র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী বলেছেন, তিনি ব্লগে লেখালেখির সূত্রে অভিজিতের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন। লেখালেখির একপর্যায়ে অভিজিতের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে অভিজিৎ দুই বছর আগে ফারাবীকে ব্লক করে দেন। কিন্তু ফারাবী থেমে না থেকে অন্যান্য বিভিন্ন মাধ্যমে অভিজিতের কাছে বার্তা পাঠাতেন ও হুমকি দিতেন।
7ফারাবী তাঁর ফেসবুকে জানিয়েছিলেন, অভিজিৎ রায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে, তখন তাকে হত্যা করা হবে। এর আগে ফারাবী বাংলা বই বিক্রির ওয়েবসাইট ‘রকমারি ডটকম’ থেকে অভিজিৎ রায়ের বই সরাতেও হুমকি দিয়েছিলেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ফারাবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতেন। তবে তিনি পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পারেননি। প্রথমে তিনি বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করতেন, পরে নিজের নামে ফারাবী ব্লগ চালু করেন।
র‌্যাব জানায়, এর আগেও ফারাবীকে একবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের জামিনে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যান ফারাবী। আর মুক্তি পেয়েই নাস্তিকদের হত্যাকা- সমর্থন করে তিনি ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, যাতে বলা হয় আমার দৃষ্টিতে নাস্তিকরা হচ্ছে পোকামাকড় আর পোকামাকড়দের মরে যাওয়াই ভাল।
এদিকে অভিজিৎকে হত্যার পর ‘আনসার বাংলা সেভেন’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক টুইট করে এ হত্যাকা-কে বিজয় হিসেবে দাবি করা হয়। এর একটিতে বলা হয়, ‘আল্লাহু আকবর’ বাংলাদেশে আজ একটি বিশাল সাফল্য। ‘টার্গেট ইজ ডাউন’। আর অন্যটিতে অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর একটি ছবি শেয়ার করে বলা হয়, ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসলামবিরোধী ব্লগার আমেরিকান বাঙালি অভিজিৎ রায়কে রাজধানী ঢাকায় হত্যা করা হয়েছে।
‘আনসার বাংলা সেভেন’ নামে কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব বা অভিজিত হত্যায় তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে তাদের সন্দেহের তালিকায় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনও রয়েছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। হামলায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অভিজিতের স্ত্রী বন্যার একটি আঙুল। তিনি এখন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভিজিৎ খুনের ঘটনায় তাঁর বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি কোনো আসামির নাম বা কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। তিনি জানান, ব্লগে লেখালেখির কারণে উগ্রপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। এদের মদদ দিয়েছে জামায়াত-শিবির। অজয় রায়ের করা ওই মামলাতেই ফারাবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান।
ooooঅভিজিৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ৮ বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানকার একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায় সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা। তার খুনের ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতেও প্রধান শিরোনাম হয়। অভিজিৎ হত্যাকা-ের ঘটনায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান ও জানায় তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এ হত্যাকা-ের তদন্তে সহায়তার আগ্রহ দেখালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাতে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। রবিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।


Spread the love

Leave a Reply