যেকোন সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন খালেদা জিয়া

Spread the love

6নাজমিন রিয়া, বাংলাদেশ:
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ পরোয়ানা জারি করেন। আর এর প্রতিবাদে সারাদেশের বিভিন্ন্ স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরাসহ রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম জানান, জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি জানান, যেহেতু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পৌঁছেনি। তাই পুলিশের পক্ষ থেকেও ওয়ারেন্টের কপি দেখা সম্ভব হয়নি। কপি এলে পুলিশ তা খতিয়ে দেখবে। যে ধরনের নির্দেশনা থাকবে পুলিশ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
বিগত দিনগুলোতে দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নভো থিয়েটার মামলার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিকদের কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন, আইনজীবীরা যাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদাকে আইনগত সহায়তা দিতে না পারেন, সে চেষ্টাও সরকার করছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নভো থিয়েটার মামলা কোর্টে বিচারাধীন ছিল ৪ বছর। তিনি তো একদিন ও হাজিরা দিতে যাননি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক খোকন বলেন, আদালতে যেতে হবেই বিষয়টি এমন নয়। সময় চাওয়ার আইনগত অধিকার সবারই আছে এবং আদালত চাইলে বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। আমরা যেন বেগম খালেদা জিয়াকে আইনগত সহায়তা করতে না পারি, এটা সম্ভবত সরকারের পক্ষ থেকেও চাচ্ছে। এটা সভ্য সমাজে চিন্তাও করা যায় না। তিনি অভিযোগ করেন, খালেদাকে আইনগত সহায়তা দিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টিএইচ খানের বাসায় গত বুধবার এক বৈঠকের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই বাসা ঘেরাও করেছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকের নল ও দলকানা কিছু প্রচারমাধ্যম নির্ভর সরকার, এখন পতনের শেষ সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে বলে দাবি করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। জনগণ সরকারের পতনের ক্ষণগণনা শুরু করেছে বলেও দাবি করেছে জোটটি। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এ দাবি করেন।
বিবৃতিতে সরকারের প্রতি গণদাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। দাবি মানা না হলে আগামী রবিবার থেকে দেশব্যাপী হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণ এখন সরকার পতনের ক্ষণগণনা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে দম্ভ সহকারে বলেছেন- জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই। ২০ দলের ৭ দফা ব্যক্তিস্বার্থের দাবি। জনগণ যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে ভয় পায় কেন? জনগণকে ভয় পায় কেন? নির্বাচন দিন, প্রমাণ হয়ে যাবে জনগণ কাদের সঙ্গে আছে। তিনি দাবি করেন, ৭ দফা দাবির প্রত্যেকটি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য।
২০ দলীয় জোটের মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন না বলে প্রায়ই ঘোষণা দিয়ে থাকেন। তাহলে এত গণহত্যা চালিয়ে লুন্ঠনকৃত মসনদ রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কেন? জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে, দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ও নাগরিক সমাজকে অবজ্ঞা করে এবং সারা বিশ্বকে অস্বীকার করে ফ্যাসিবাদী একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না। এদেশের জনগণ তা কখনোই হতে দেবে না।
প্রধানমন্ত্রীকে আবারও আহ্বান জানিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, গণআন্দোলনে নির্মম পতনের হাত থেকে যদি বাঁচতে চান, জনরোষের কবল থেকে যদি রক্ষা পেতে চান, তাহলে অবৈধ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার প্রবল উন্মাদনা পরিত্যাগ করে দ্রুত পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিন। প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষমূলক রাজনীতি পরিত্যাগ করে জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব গণমাধ্যমে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ প্রকাশকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সংবাদপত্রসহ সকল গণমাধ্যমকে আমরা সরকারী অবৈধ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে জাতীয় জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে গণতন্ত্র মুক্তির লড়াইয়ে শরিক হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।


Spread the love

Leave a Reply