নাটক ও দায়বদ্ধতার বাংলাদেশ

Spread the love

17190792_1429531697088643_6668739651344171450_nসাইদুল ইসলাম:
বর্তমান বিশ্বের বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো জঙ্গীবাদ সমস্যা। পৃথিবীর সমস্ত নাগরিক কোন না কোন ভাবে সন্ত্রাসী অাক্রমনের ঝুকিতে রয়েছেন, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে এই ঝুকিটা বেশিই। বাংলাদেশের জঙ্গী সমস্যা বেশ অাগে থেকে। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরনের উৎসবে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করার মাধ্যমে এবং ২০০৪ সালের ২১শে অাগস্ট বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অাওয়ামীলীগের জনসভায় ইতিহাসের জগন্যতম গ্রেনেড হামলা চালিয়ে অাইভী রহমান সহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয় এবং প্রায় ৩০০শত জনের বেশী লোক মারাত্নকভাবে অাহত হয়। ২০০৫ সালের ১৭ই অাগস্ট সারা দেশের ৬৩জেলার পাঁচ শতটি স্পটে এক যোগে বোমা বিস্ফোরন ঘটিয়ে জঙ্গীরা শান্তির এই জনপদে অাতংক সৃষ্টি করে। সেই থেকে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ একটি মারাত্নক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গীদের শীর্ষ নেতা শায়খ অাব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি কার্যকরের পর কয়েকবছর ছড়িয়ে চিটিয়ে থাকা জঙ্গীরা বেশ নিরব ছিল। হয়তো এটা ছিল তাদের শক্তি সঞ্চয় করার একটি কৌশল। কিন্তু ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে দেশে জঙ্গীবাদ অাবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব, সীমিত গনতন্ত্র, অকার্যকর সংসদ, জনগনের প্রতি রাজনীতিবিদদের দায়িত্বহীনতার সুযোগ নিয়ে জঙ্গীরা নিজেদের একত্রিত করতে পারছে। পাশাপাশি প্রযুক্তির কল্যানে অান্তর্জাতিক জঙ্গীদের ইন্দনে ও পরামর্শক্রমে তারা নিজেদের সংঘটিত করছে এবং হামলাও করছে। ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই রাতে গুলশানের হলি অার্টিজানে হামলা চালিয়ে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক, পুলিশ সহ অন্তত ২৪ জনকে হত্যা করে দেশের বুকে জঙ্গীরা কালি লেপন করে। এর পর থেকে সরকার জঙ্গীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখালেও সাধারন জনগনকে সরকায় অাস্থায় অানতে ব্যার্থ হচ্ছে। জঙ্গী দমনে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ গুলো নানা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। এর প্রথম কারন হচ্ছে সরকার জঙ্গী সন্দেহে যেসব বাড়ী বা অাস্থানা ঘেরাও করে অভিযান চালাচ্ছে, সেখান থেকে কাওকে জীবিত ধরতে পারছে না। বিশেষ করে সিলেটের অাতিয়া মহলে অভিযান চলাকালীন সময়ে বাহিরে কড়া নিরাপত্তাবেস্টনির মধ্যে দু দফা বোমা বিস্ফোরনে অাইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৬ নিহত ও ৫০ জনেরও বেশী অাহত হন। মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে টানা তিন দিন অভিযান চালিয়ে দু মাসের শিশু সহ চার শিশু, দুজন মহিলা ও একজন পুরুষের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্বার করে। প্রত্যেকটি ঘটনা প্রবাহ এবং পুলিশের বক্তব্য বিশ্লেষন করলে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয়। পরবর্তীতে জনগন দায়ীত্বহীন বিরোধীদলের বিরোধীতার খাতিরে বিরোধী বক্তব্যের অাশ্রয় নিয়ে এটাকে নাটক হিসেবে অাখ্যায়িত করলেও অাইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পাল্টা বক্তব্য পাওয়া যায় না। দিনশেষে এটাই মেনে নিতে হবে যে দেশে জঙ্গী অাছে এবং তা রাজনৈতিক শুন্যতা ও রাজনীতিবিদদের দূরদর্শিতার অভাবকে কাজ লাগিয়ে জঙ্গীরা বড় কোন ধরনের নাশকতার চক অাঁকছে। সবকিছুর পরে দেশে যাই হোক না কেন, এখানে সরকার-বিরোধীদল থেকে শুরু করে অামরা যারা সাধারন জনগন অামাদের সকলের দেশের প্রতি সমান দায়বদ্ধতা। বিপদ অাসলে সকলের জন্যই অাসবে। সুতরাং নাটক বলে দায়িত্ব না এড়িয়ে অাসুন জঙ্গী, মানবতাবিরোধী,সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক অান্দোলন গড়ে তুলি, দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি, রক্ষা করি প্রিয় দেশ মাতৃকাকে।

Spread the love

Leave a Reply