সময়মত হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে রাস্তায় সন্তান প্রসব , বাঁচানো গেল না নবজাতককে

Spread the love

volagonj-rasta-pic-600x335বাংলা সংলাপ ডেস্কঃমানুষের চলাফেরা ও জীবন যাত্রাকে সহজ করার জন্যই তৈরি হয় রাস্তা। রাস্তা নগরের সাথে গ্রামের, শহরের সাথে নগরের, এমনকি দেশের সাথে দেশেরও মেলবন্ধন ঘটায়। রাস্তা বা পথ মানুষের বড় আপন। কিন্তু সেই রাস্তাই কখনো কখনো হয়ে ওঠে ‘মরণ ফাঁদ’! যেখানে এসে থেমে যায় মানুষের জীবন। তবুও জীবনের তাগিদে নির্ঘাত মৃত্যু জেনেও পথ চলতে হয় মানুষকে।
এমন নির্ঘাত মৃত্যুকে সঙ্গী করেই পথ ধরেছিলেন ভোলাগঞ্জের গর্ভধারীনি মা বেগম। কিন্তু সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে পথেই জন্ম দেন এক প্রাণহীন সন্তানের। বিয়োগান্ত এ ঘটনার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছে ভুক্তভোগী ওই পরিবার। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের লালবাগ এলাকায় গত রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী নারীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভোলাগঞ্জ গ্রামের আশিক মিয়ার (৪২) স্ত্রী বেগম এর প্রসব বেদনা উঠলে দুপুর ১টার দিকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাড়–য়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে ঘন্টা খানেক রাখার পর তাকে দ্রুত সিলেটে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে সিএনজি অটোরিক্সা করে বেলা ২টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। গাড়ি যত ছুটছে প্রসব বেদনায় ছটফট করছে বেগম। লালবাগ এলাকায় পৌঁছনোর পর তার প্রসব বেদনা তীব্র হয়। তাই সেখানেই গাড়ি থামিয়ে পুত্র সন্ত্রানের জন্ম দেন বেগম। কিন্তু প্রসবের পর হতভাগ্য মা বাঁচলেও নাড়িছেঁড়া ধন নবজাতক সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। ভুক্তভোগীর পরিবার এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে। বেগম এর আত্মীয় সাইফুল ইসলাম জানান, পাড়–য়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে দুপুর ২টায় তারা রওয়ানা করেন। লালবাগ এলাকায় যখন পৌঁছেন তখন ঘড়িতে বিকাল সাড়ে ৫টা। ক্ষুব্ধ সাইফুল বলেন, সড়ক যদি বিপজ্জনক হয়, তবে সেই সড়কের প্রয়োজন কি! বেগম এর স্বামী আশিক বলেন, ‘এইটা কি রাস্তা নাকি মৃত্যু যম? শুধু এই রাস্তার জন্যই আমার সন্তানটি মারা গেল।’
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা। ৩৭ কিলোমিটার সড়কের বিটুমিন কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কের লেজে গোবরে অবস্থা হয়েছে। সড়কে বিপজ্জনক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ রাস্তায় প্রতিমুহুর্তে অপেক্ষা করে মৃত্যু ঝুঁকি। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে কয়েক শ’ মাল-বোঝাই ট্রাক-ট্রাক্টর, যাত্রীবাহী অটোরিক্সা চলাচল করে। ৩৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে সিলেট শহরে বা অন্য কোথাও নেওয়ার প্রয়োজন হলে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। প্রসূতি কোনো মাকে এই পথে আনা-নেওয়া করলে মৃত্যু ভয় সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়। খানাখন্দে ভরপুর সড়কে প্রায়ই যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকে। মালবোঝাই ট্রাক নষ্ট হলে বা দেবে গেলে সড়কে যানজট লেগে যায়। তখন মাল নামানো ও যান চলাচলে বিঘœ ঘটে।এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তো আছেই।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল একনেকের বৈঠকে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক সংস্কারে ৪৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদনের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পেয়েছে স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। চলতি বছরের ৩১ মে প্রকল্পটির চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়। তবে, তাদের কাজের গতি নিয়ে এরই মধ্যে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সংস্কারের নামে বড় বড় কিছু গর্ত ভরাট করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মানুষের দুর্ভোগ বরং বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বেগম এরমত বহু গর্ভধারীনি মা রাস্তার ধারে জন্ম দিচ্ছেন নিষ্প্রাণ সন্তান। এভাবে থেমে যাচ্ছে মানুষের জীবন।


Spread the love

Leave a Reply