১১ মিনিটেই লন্ডন টু নিউইয়র্ক!

Spread the love

Antipode_real_intr_3562098bবাংলা সংলাপ ডেস্ক

ঢাকা থেকে বিমানে নিউ ইয়র্ক যেতে ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। শুধু লন্ডন থেকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউ ইয়র্ক যেতেও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে।

কিন্তু লন্ডন থেকে মাত্র ১১ মিনিটেই যাওয়া যাবে নিউ ইয়র্কে! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এরকমই অবিশ্বাস্য গতিসম্পন্ন বিমানের পরিকল্পনা করছেন প্রকৌশলীরা। লন্ডন থেকে বিমানে ওঠার পর হয়তো চা খাওয়ারও সময় পাবেন না, পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে।

শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম কনকর্ড বিমান তৈরি হয়েছে অনেক আগেই। যেটিকে বলা হয় সুপারসনিক বিমান। অর্থাৎ কোন বিমানের গতি যদি শব্দের গতির চেয়ে বেশি হয় তাকে বলা হয় সুপারসনিক বিমান।

কনকর্ডের গতি ম্যাক-২.০৪ (ঘণ্টায় ২ হাজার ১৮০ কিলোমিটার)। অর্থাৎ ঘণ্টায় শব্দের গতির চেয়ে ২.০৪ গুণ বেশি গতিতে উড়তে পারে কনকর্ড। এই কনকর্ড অর্থাৎ সুপারসনিকের পর আসে হাইপারসনিক গতির উড়োজাহাজের ধারণা। এর গতিবেগ শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ।

গত বছরের অক্টোবরে স্ক্রিমর নামে হাইপারসনিক বিমানের নকশা হয়, যার গতি ম্যাক-১০। অর্থাৎ শব্দের গতির চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে উড়তে সক্ষম হবে তা। সে হিসেবে লন্ডন থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে পৌঁছতে পারবে মাত্র দেড় ঘণ্টায়।

স্ক্রিমরের নকশা হলেও বিমানটি তৈরি হয়নি আজ অবধি। ফলে তা কাগুজে তত্ত্ব হয়েই থেকে গেছে। স্ক্রিমরের নকশা করেছিলেন কানাডার বিমান কোম্পানি বম্বারডিয়ার ইনকরপোরেশনের প্রকৌশলী চার্লস বম্বারডিয়ার। চার্লসের দাদা জোসেফ আরম্যান্ড-বম্বারডিয়ার মূল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। বম্বারডিয়ার কোম্পানির হয়ে নতুন নতুন বিমানের ডিজাইন তৈরি করেন চার্লস।

কিন্তু চার্লস এবার এমন হাইপারসনিক বিমান তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন যেটি লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যেতে পারবে অবিশ্বাস্য ১১ মিনিটে। চার্লস এর নাম দিয়েছেন অ্যান্টিপড। এ যাবৎকালে যত বিমানের নকশা করা হয়েছে, তার মধ্যে অ্যান্টিপডের গতি সবচেয়ে বেশি। এর গতি ম্যাক-২৪। অর্থাৎ শব্দের গতির চেয়ে ২৪ গুণ বেশি গতিতে আকাশে উড়তে সক্ষম হবে অ্যান্টিপড। সুপারসনিক কনকর্ডের গতির চেয়ে অ্যান্টিপডের গতি ১২ গুণ বেশি হবে। অ্যান্টিপডে রকেটের জ্বালানি ব্যবহার করা হবে। আর উচ্চগতির কারণে যাতে আগুন না লাগে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

50767875স্ক্রিমর জেট বা বিমানের ধারণা দেওয়ার সময় চার্লস দাবি করেছিলেন, এই জেটে চেপে আটলান্টিক মহাসাগরকে মনে হবে একটা লেকের মতো। তবে এবার আরও অত্যাধুনিক স্ক্রিমর বিমানের কথা বলছেন তিনি যা ঘণ্টায় ২০ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম। এ বিমানে চেপে লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক থেকে যাওয়া যাবে মাত্র ১১ মিনিটেই! ১০ জন আরোহী নিয়ে সর্বোচ্চ ম্যাক-২৪ গতিতে ছুটতে পারবে ‘অ্যান্টিপড’ নামের এ বিমান। যার গতি হবে স্ক্রিমরের চেয়ে দ্বিগুণ আর কনকর্ড বিমানের চেয়ে ১২ গুণ বেশি।

লন্ডন থেকে নিউইয়র্কের দূরত্ব ৩ হাজার ৪৫৯ মাইল (৫ হাজার ৫৬৬ কিলোমিটার)। আর অ্যান্টিপডের গতি ঘণ্টায় ১২ হাজার ৪৩০ মাইল (২০ হাজার কিলোমিটার)। সে হিসেবে লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক পাড়ি জমাতে এর সময় লাগবে মাত্র ১১ মিনিট। আর এ গতিতে নিউ ইয়র্ক থেকে চীনের সাংহাই যাওয়া যাবে ২৪ মিনিটে এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যাওয়া যাবে মাত্র ৩২ মিনিটে।

এ প্রসঙ্গে চার্লস আরো বলেন, স্ক্রিমর জেটের মতোই এই বিমানকেও চৌম্বকীয় রেলগান ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথমে আকাশে ছোঁড়া হবে। এ ধরনের ব্যবস্থায় রেললাইনের মতো সমান্তরাল একটি ব্যবস্থার ওপর বসিয়ে শক্তিশালী তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে একে আকাশে ছোঁড়া হবে। আকাশে ওঠার সময় এর সর্বোচ্চ গতি হবে ম্যাক-১০ এর সমান। এরপর তরল অক্সিজেন বা কেরোসিন রকেট আকাশে এর গতি আরও বাড়িয়ে দেবে। সবশেষে স্ক্রিমজেট ইঞ্জিন চলতে শুরু করবে এবং বিমান সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছাবে।

আকাশে ওঠার সময় যে রকেটগুলো কাজ করবে, সেগুলো লাগানো থাকবে অ্যান্টিপডের ডানায়। এই রকেটের মাধ্যমে এটি ৪০ হাজার ফুট পর্যন্ত ওপরে উঠবে। বিমানটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় ওঠার পর রকেটগুলো ডানা থেকে আলাদা হয়ে পুনরায় এয়ারফিল্ডে ফিরে আসবে। রকেটগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় বিমানের কম্পিউটার সুপারসনিক র‌্যামজেট ইঞ্জিন চালু করবে, যা এর গতিকে ম্যাক-২৪ এ উন্নীত করবে।

গত বছর স্ক্রিমর বিমানের যে ধারণা দেওয়া হয়েছিল সেটি সাধারণত সব জায়গা থেকে উড্ডয়নে সক্ষম নয়। কিন্তু অ্যান্টিপডের ক্ষেত্রে তেমনটি হবে না। অত্যাধুনিক এ বিমান পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট বুস্টারের মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে উড্ডয়ন করতে পারবে। শুধু তাই নয়, ছয় হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়েতে এটি অবতরণও করতে পারবে।

Antipode_intro_3562097bঅবশ্য এ বিমান তৈরির খরচও হবে অনেক বেশি। এ ব্যাপারে চার্লস বলেন, যদি চাহিদা থাকে, তাহলে হয়তো অ্যান্টিপড তৈরির কাজে হাত দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এরকম একটি বিমান তৈরিতেই খরচ পড়বে অন্তত ১৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে প্রথমেই এক্ষেত্রে আরো বেশি গবেষণার প্রয়োজন হবে।

চার্লসের দাবি, অ্যান্টিপড ব্যবসায়ীক ও সামরিক- উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যাবে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, ভারত ভিত্তিক ডিজাইন ল্যাব লুনাটিক কনসেপ্টস-এর প্রতিষ্ঠাতা অভিষেক রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে অ্যান্টিপডের নকশা তৈরি করেছেন তিনি।


Spread the love

Leave a Reply