সিঙ্গাপুরে আটক ২৭ বাংলাদেশি ‘জঙ্গি’র মধ্যপ্রাচ্যে হামলার পরিকল্পনা ছিল

Spread the love

1453308425বাংলা সংলাপ ডেস্কঃ সিঙ্গাপুরে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২৭ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের প্রায় দু’মাস পর দেশটি এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে সিঙ্গাপুরে হামলার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। ইতিমধ্যে ২৬ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অপর বাংলাদেশি অবৈধভাবে সিঙ্গাপুর থেকে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে দেশটির একটি কারাগারে রয়েছে। সাজাভোগ শেষে তাকেও দেশে ফেরত পাঠানো হবে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, দেশে পাঠানো ২৬ জনের ১৭ জন পুলিশের হেফাজতে আছেন। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, ‘২৬ জনের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিরা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অনুসারী।গতকাল প্রকাশিত সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা নির্মাণশ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুরে কাজ করতো। গত বছরের ১৬ই নভেম্বর থেকে ১লা ডিসেম্বরের মধ্যে ইন্টারনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (আইএসএ)-এর অধীনে তাদের আটক করা হয়। তারা আল কায়েদা, আইএসের মতো কট্টরপন্থি জিহাদি সংগঠনগুলোর আদর্শের সমর্থক। নিজেদের মধ্যে তারা গোপনে জিহাদ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ভিডিও চিত্র, তথ্য ও বইপত্র বিনিময় করতো। সিঙ্গাপুরের মোস্তফা মার্কেটের পাশে একটি মসজিদে সাপ্তাহিক বৈঠকে মিলিত হতো। আলোচনা করতো সশস্ত্র জিহাদ নিয়ে। বাংলাদেশ থেকে আরও সদস্য সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল তাদের। এদের কয়েকজনের প্রত্যাশা ছিল মধ্যপ্রাচ্যে সশস্ত্র জিহাদে যোগ দেয়ার। তবে সিঙ্গাপুরে কোনো হামলা চালানোর পরিকল্পনা তাদের ছিল না বলে উল্লেখ করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আটক বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ পোষণ করে। এছাড়া তারা কট্টরপন্থি গ্রুপের কাছে আর্থিক সহায়তাও পাঠিয়েছে। আটক এই গ্রুপের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জিহাদি সংক্রান্ত বইপত্র ও প্রশিক্ষণের ভিডিও চিত্র। এসব ভিডিওতে শিশুদের প্রশিক্ষণের ফুটেজ রয়েছে। ধারণা করা হয়, কট্টরপন্থিদের শিবিরে প্রশিক্ষণের ফুটেজ সেগুলো। কারাগারে থাকা ২৭তম বাংলাদেশি ওই জঙ্গি গ্রুপের সদস্য নয়। তবে তাকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সিঙ্গাপুর সরকার সন্ত্রাসবাদে যে কোনো প্রকার সমর্থনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। আর সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেয়া যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হবে। সিঙ্গাপুরে থাকা বিদেশি নাগরিকদের প্রসঙ্গে বলা হয়, বিদেশিরা আমাদের দেশের অতিথি। তবে এ সুবিধার অপব্যবহার করে তাদের স্থানীয় রাজনৈতিক এজেন্ডা আমদানি করার ঘাঁটি হিসেবে সিঙ্গাপুরকে ব্যবহার করা তাদের উচিত হবে না।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৪ জন কারাগারে: জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানোর পর উত্তরার একটি বাসা থেকে এই ২৬ বাংলাদেশিকে আটক দেখায় পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২১শে ডিসেম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় প্রত্যেককে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আদালত শুনানি শেষে সেসময় ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে এই ১৪ জনকে মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কারাগারে থাকা এই ১৪ জন হলেন টাঙ্গাইলের আমিনুর (৩১), আবদুল আলিম (৩৩) ও শাহ আলম (২৮); কুমিল্লার গোলাম জিলানী (২৬), নুরুল আমিন (২৬) ও মাহমুদুল হাসান (৩০); ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাফর ইকবাল (২৭); ঝিনাইদহের আকরাম হোসেন (২৭); চুয়াডাঙ্গার আবদুল আলী (৪০); পাবনার আশরাফ আলী (২৭); ঢাকার সাইফুল ইসলাম (৩৬); কুড়িগ্রামের আলম মাহবুব (৩৪); চাঁপাই নবাবগঞ্জের ডলার পারভেজ (৩৫) ও মুন্সীগঞ্জের মোহাম্মদ জসিম (৩৩)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, ‘প্রথম দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে তাদের আবারো রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।’ ডিবির এই উপ-কমিশনার জানান, ‘অপর ১২ জনের ক্ষেত্রে অভিযোগের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া না যাওয়ায় তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে এদের প্রত্যেককে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’
উপ-কমিশনার বলেন, আটককৃতরা সবাই সিঙ্গাপুরে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। তারা সিঙ্গাপুরের মোস্তফা মার্কেটের পাশের একটি মসজিদে মিলিত হয়ে জঙ্গি কার্যক্রম চালাতো। তারা সবাই আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অনুসারী। ওই মসজিদে বসে তারা আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের তাত্ত্বিক নেতা জসিমউদ্দিন রাহমানীর ভিডিও বয়ান শুনতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
এদিকে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের মোস্তফা নামের একটি মার্কেটের কাছে এক মসজিদে সপ্তাহে একদিন তারা মিলিত হতেন। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা হতো। এমনকি সেখানে জিহাদি বক্তব্য প্রচার করে এবং ভিডিও দেখিয়ে অন্যদের জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগ করা হয় তাদের বিরুদ্ধে। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মাহবুব উজ-জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, বহিষ্কৃতরা বেশ কিছুদিন ধরে সিঙ্গাপুরের নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলো। এদের আটক করার পর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নে সিঙ্গাপুর সরকার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।


Spread the love

Leave a Reply