ব্রিটিশ নাগরিকত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়ছেন তিন বাংলাদেশি

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃচরমপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব হারানোর মুখে রয়েছেন অন্তত তিনজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিক। নিজেদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাঁচাতে তারা এখন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
এই তিনজনের মধ্যে যুক্তরাজ্যেই জন্ম নেওয়া একজন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। আইনি কারণে সাংকেতিক ভাষায় তাদের নাম বলা হচ্ছে ই-থ্রি, জি-থ্রি। আরেকজনের নাম এন-থ্রি। তিনি বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ নাগরিক। গত বছর জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ১০০ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাজ্য। এই তিনজন ওই তালিকাতে আছেন।

৩৭ বছর বয়সী ই-থ্রি যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার বাবা-মা বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। ২০১৭ সালের জুন মাসে ইসলামিক চরমপন্থার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার নাগরিকত্ব বাতিলের নোটিশ দেওয়া হয়। তার আইনজীবীর দাবি, বাংলাদেশে থাকা পরিবারকে সহায়তা করার জন্য তিনি যুক্তরাজ্যে সাধারণভাবে কাজ করছেন। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময় বাংলাদেশ সফরকালে তার নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাজ্য।

এন-থ্রির যুক্তরাজ্যে তিন সন্তান রয়েছে। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কয়েক সপ্তাহের জন্য তুরস্ক সফর করার পর তার নাগরিকত্ব বাদ দেওয়া হয়। তার আইনজীবীর দাবি, ৩৫ বছর বয়সী এন-থ্রি বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছেন। তিনি ব্যবসার কাজে তুরস্কে গিয়েছিলেন। এখনও তিনি সেখানেই অসহায় দিন যাপন করছেন। লন্ডনে জন্ম নেওয়া নারী জি-থ্রি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সদস্য ছিলেন। ২০১৬ সালে সিরিয়া সীমান্ত থেকে দুই শিশু সন্তানসহ তাকে আটক করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডানকান লুইস সলিসিটর বলেছে, যুক্তরাজ্য ফিরে আসার কয়েকদিন আগে এসব ব্যক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে টার্গেট করা হয়েছে। তারা কোনও ধরনের আয়ের উৎস বা সহায়তা ছাড়াই বিদেশি রাষ্ট্রে অসহায়ভাবে অবস্থান করছে।

যুক্তরাজ্য সরকার যুক্তি দিচ্ছে, এসব মানুষ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলেও তারা রাষ্ট্রহীন হবেন না। তবে এই মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাজ্যের স্পেশাল ইমিগ্রেশন অ্যান্ড আপিলস কমিশন এক গোপন শুনানি করেছে। শুনানির রায়ে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কমিশন দেখেছে, বাংলাদেশি আইন অনুসারে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভুতদের ২১ বছর বয়সে নাগরিকত্বের আবেদন করতে হয়। কিন্তু এই ব্যক্তিরা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা এখন শুধু ব্রিটিশ নাগরিক।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে যাচ্ছি। এজন্য এই বিষয়ে আর কিছু বলা উচিত হবে না।’

আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কোনও মানুষকেই রাষ্ট্রহীন করা চলবে না। তবে যুক্তরাজ্যের ২০১৪ সালের অভিবাসন আইনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ বিঘ্ন ঘটানোর আশঙ্কা থাকলে যে কারও নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে। যুক্তরাজ্য সরকারের ২০১৮ সালের ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট অন ডিসরাপ্টেড অ্যান্ড ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ারস এ বলা হয়েছে, যদি অন্য কোনও দেশের আইনে নাগরিক হওয়ার সুযোগ থাকে তাহলেই কেবল এমন করা যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এজন্য যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে বের করতে হবে। ভবিষ্যতে এই পদক্ষেপ ব্যবহার করে আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায় সরকার।


Spread the love

Leave a Reply