কেন হারলো ইংল্যান্ড

Spread the love

বাংলা সংলাপ ডেস্কঃমঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল। ইংলিশদের সম্ভাবনাটাও দেখাচ্ছিল স্পষ্ট। কিন্তু হলো না। দারুণ শুরু নিয়েও শেষ পর্যন্ত হারের বেদনায় নীল হলো তারা। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হারের কারণ কি?

এ নিয়ে পোস্টমর্টেম করছেন ফুটবল বোদ্ধারা। মস্কোয় ম্যাচের পঞ্চম মিনিটের গোলে দারুণ শুরুর পর হতাশার বিদায় দেখে হ্যারি কেইন বাহিনী।অতিরিক্ত সময় ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। ক্লান্তি আর মনোযোগের অভাবে শেষ গোলটি হজম করে হ্যারি কেইনের দল। দুই দলের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার পার্থক্য, মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ ও ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মনোযোগের ঘাটতি কাজে লাগায় লুকা মদরিচের দল। পুরো ম্যাচে ইংলিশদের বলদখল ছিল ৪৫%। আর গোলে বেশি শট নিতে না পারাটাও ডুবিয়েছে ইংল্যান্ডকে। ম্যাচে প্রতিপক্ষ গোলবারের ক্রোয়াটরা নেয় ২২টি শট। ইংল্যান্ডের এ সংখ্যাটা অর্ধেক (১১)। ম্যাচের আগে ক্রোয়েশিয়া দলকে ‘ক্লান্ত’ বলে বিদ্রূপ করে ইংলিশ মিডিয়া। মাঠের খেলায় তা ভুল প্রমাণ করে ক্রোয়াটরা। উল্টো যেন ১২০ মিনিট খেলার মতো উদ্যম ছিল না ইংলিশদের। নিউইয়র্ক টাইমস ইংল্যান্ডের হারের কারণ বিশ্লেষণ করে। সেখানে উঠে আসে ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়ের শারীরিক সক্ষমতা ও ক্লান্তি জয়। বলা হয়, খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই তাদের পা কাজ করছিল না। তাদের মাংসপেশীতে ব্যথা। ফুসফুস ঘন ঘন উঠা-নামা করছে। শরীর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। যেন আর্তনাদ করছে শরীর। ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়রা তাদের সক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন আরো একবার। বৃক্ষরস থেকে নিঃসৃত হরমোনের মধ্যে যেন তারা ডুবে যাচ্ছিলেন। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলেও তাদের গতি যেন বাড়ছিল। রগগুলো আরো শক্ত হয়ে উঠছিল। নিশ্বাস নিচ্ছিলেন হাঁপিয়ে। একপর্যায়ে তাদেরকে দেখে মনে হয় তারা সম্ভবত আর বেশি কিছু দিতে পারবে না। তবু তারা সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। প্রতিপক্ষকে পিছিয়ে রাখেন। দৌড়াতে থাকেন। দৌড়াতে দৌড়াতে ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে গড়েন ইতিহাস।

নকআউট পর্বে টানা তিন ম্যাচেই ১২০ মিনিট খেলে ক্রোয়েশিয়া। তিন ম্যাচেই পিছিয়ে থেকে ম্যাচে ফেরে ক্রোয়াটরা। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারায় তারা। সেমিফাইনাল টাইব্রেকারে যাওয়ার আগেই জয়োল্লাসে মাতে। এবারের আসরে অতিরিক্ত সময়ের স্নায়ুচাপে তাই ইংল্যান্ডের চেয়ে উজ্জীবিত ছিল মদরিচ বাহিনী। টুর্নামেন্টের অন্যতম তরুণ দল ইংল্যান্ড। অভিজ্ঞতায় ক্রোয়েশিয়া যোজন যোজন এগিয়ে। ক্রোয়াটদের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণে আছেন অধিনায়ক লুকা মদরিচ ও ইভান রাকিটিচের মতো অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার। বল নিয়ন্ত্রণে ক্রোয়েশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। ৫৫ শতাংশ বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে ক্রোয়েশিয়া। আক্রমণের আধিপত্যেও ক্রোয়েশিয়ার ধারেকাছে আসতে পারেনি ইংল্যান্ড। এটিও হ্যারি কেইনদের হারের অন্যতম কারণ। গোলমুখ তাক করে মোট ১১টি শট নেয় ইংলিশরা। যার মাত্র ২টি থাকে পোস্টে। অন্যদিকে পেরিসিচ-মানজুকিচদের ২২টি গোলের প্রচেষ্টার ৭টি ছিল অন টার্গেটে। প্রথমার্ধে গোছানো ইংল্যান্ড বিরতির পর থেকে যেন হারিয়ে যায়। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ক্রোয়েশিয়ার হাতে। সমতায় ফেরার পর তা আরো গাঢ় হয়। দলকে ম্যাচে ফেরানোর পর পেরিসিচের আরেকটি শট পোস্টে না লাগলে ৯০ মিনিটেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তো ক্রোয়েশিয়া। ফিনিশিং দুর্বলতায় নিজেদের হারিয়ে খোঁজে ৬৬’র চ্যাম্পিয়নরা।

শেষ পর্যন্ত উদ্যম ধরে রেখে প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার ইতিহাস গড়ে ক্রোয়েশিয়া। ২-১ গোলের জয়ে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্বপ্নকে কবর রচিত করে লুকা মদরিচের দল। ডি-বক্সে ইংলিশ ডিফেন্ডারের পেছন থেকে এসে সিমে ভ্রাসালিকোর ক্রস বুটের টোকায় জালে পাঠান ইভান পেরিসিচ। ফ্রি-কিক থেকে ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে পড়া ক্রোয়েশিয়া সমতায় ফেরে ৬৮ মিনিটে। ১০৯ মিনিটে মারিও মানজুকিচকে মার্কিং করতে পারেননি (পড়ুন মনোযোগ ধরে রাখতে পারেননি) ইংলিশ সেন্টারব্যাক জন স্টোনস। উপরে উঠে যাওয়া বল আচমকা পেছনে হেড করেন ম্যাচ সেরা পেরিসিচ। স্টোনস বুঝে ওঠার আগেই গোলপোস্টের বাম পাশে শট নেয়ার পজিশন পেয়ে যান মানজুকিচ। পরাস্ত হন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। বাকি সময়টায় ম্যাচে ফেরা হয়নি ইংল্যান্ডের।


Spread the love

Leave a Reply