যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল: ওয়েস্টমিনিস্টারের সামনে একটি গণতন্ত্রের আত্মহত্যা !

Spread the love

rezaরেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী:

প্রিয় বাংলাদেশী গণতন্ত্র তুমি কেমন আছো? নিশ্চয়ই তুমি ভালো নেই। তোমাকে অর্জন করতে গিয়ে আমরা অনেক কিছু ত্যাগ করেছি। ৫২, ৬৯, ৭১, সে সব তো ইতিহাস। তারপর ৯০, এরাশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ঠিক এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে নয় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই। ৯০ থেকে ২০০৮ যা  ঘটেছে সবই তো চোখের সামনেই। সে জন্য ইতিহাস ঘাটতে হবেনা। তোমার যে নাম সে নাম মুখে না নেয়াই উত্তম। কারন তোমার নাম মুখে নিলে বার বার আমাদেরকে লজ্জিত হতে হয়। অনুশোচনায় ভুগি আমরা। তবে তোমার নাম নিতে এখন আমি লজ্জা বোধ করি। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় গণতন্ত্র তোমাকে গলা ঠিপে হত্যা করে নিজেই হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে সারা জীবন জেল খাঁটি। কিন্তু তোমাকে আমি হত্যা করতে পারিনা। তোমাকে হত্যা করতে হলে গোটা এই  পৃথিবীর পার্লামেন্টগুলো উড়িয়ে দিতে হবে। আমি কি সেটা পারবো? বাংলাদেশের কোনো এক রাজনীতিবীদ নাকি পার্লামেন্টকে শুয়োরের খোয়ার বলে গালি দিয়েছিলেন। বৃটেনের হাউস অব পার্লামেন্টকে গাই ফক্স উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আর আমি? আমার কথা তো বললাম তোমাকে হত্যা করে ফেলি। আমি কি পারবো? জানিনা, তবে চেষ্ট করছি। কবি বলেছেন একবার না পারিলে দেখ শত বার। বাংলদেশের গণতন্ত্র সে তো সোনার হরিন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে  হত্যা করার জন্য বার বার শাসক গোষ্ঠী চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।  বাংলাদেশে বেশ কটি দল গণতন্ত্রের ধারক বাহক! কিন্তু দলে কতটুকু গণতন্ত্র আছে তা নিয়ে কি কেউ প্রশ্ন তুলে?।

বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন নিয়ে লিখবো কি লিখবো না অনেকটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম, কারন লিখলে তিন কথা, না লিখলে কোনো কথা নেই। তারপরও লিখতে হয় লিখতে হবে। কারন লেখালেখির উপরে তো কোনো কিছুই  নেই। বিএনপি যুক্তরাজ্য শাখার কাউন্সিল হবে, এ রকম কথা বেশ কয়েক মাস থেকেই শুনে আসছিলাম। কাউন্সিলে নেতৃত্বের পরিবর্তন হবে এমন আভাস ও নেতা কর্মীদের মুখে মুখেই আলোচনা চলছিল। তবে আমার কেন জানি মনে হয়েছিল বিএনপি যুক্তরাজ্য কমিটির নেতৃত্বের পরিবর্তন হবেনা, এম এ মালেক সাহেব অত্যন্ত সফল সংগঠক, কায়ছার সাহেব নানা কারনে তারেক রহমান সাহেবের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন, সেটি  যে করেই হোক————–। তবে যুক্তরাজ্য বিএনপির যে কমিটি রয়েছে সেখানে সভাপতি সাধারন সম্পাদকের ব্যাপারে আমি কোনো কিছু লিখতে পারবনা। কারণ তাদের সাথে আমার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক যে পর্যায়ে রয়েছে সেখান থেকে কোনো কিছু লিখলে তারা হয়তো মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে দিবেন। লন্ডনে নানা কারনে বিএনপির কমিটি গুরুত্ব বহন করে। বর্তমানে যেহেতু তারেক রহমান সাহেব লন্ডনে অবস্থান করছেন সেহেতু বিএনপির কমিটি আরো গুরুত্ব বহন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিছু দিন আগে কোন একটি অন-লাইনে তারেক রহমান সাহেবের ব্যাপরে, বিএনপির ব্যাপারে লেখা হয়েছে, অনেকেই বলেছেন সেটি নাকি আওয়ামী সমর্থিত অনলাইন । আমি পড়েছি, দীর্ঘ লেখায় লন্ডনে হাওয়া ভবন গড়ে উঠার অভিযোগ রয়েছে। আমি সে সবে যেতে চাইনা। কারণ সে সব লিখলে তারকে রহমান সাহেবের লোকজন উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন, উত্তর লিখতে গিয়ে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক টেনে আনেন অনেকে।

সে যাক, কোনো লেখার উত্তর যদি দিতে হয় তাহলে প্রফেশনালি দেয়াই ভালো। আমরা যারা লন্ডনে বসে সাংবাদিকতা করি তারা তো কোনো দলের দালালি করিনা। অন্তত আমার ব্যাপারে আমি হলফ করে বলতে পারি। আামাকে কেউ বলে আওয়ামীলীগ সমর্থক, কেউ বলে বিএনপি। আমি অসংখ্য বার বলেছি আজও বলছি সাংাদিকতা করে তো পেট চালাইনা। অতএব আওয়ামীলীগ, বিএনপির দালালি এ জীবনে করতে হবেনা। তা ছাড়া যা আছে তা নিয়েই আমি সন্তুষ্ট। আল্লাহ তালার শুকরিয়া আদায় করি।

সে যাক, আসল কথায় আসি। বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন হবে জানুয়ারীর ২ তারিখ এমন একটি ঘোষণা হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে কাউন্সিলের আগের দিন পর্যন্ত নেতা নেত্রীরা জানেননা কোথায় হবে সেটি। চ্যানেল আইর লন্ডন অফিসে অনেকেই যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছেন। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েছি। কারণ কাউন্সিল হবে বিএনপির, মিডিয়ার অফিসে কেন তারা ফোন করে জানবে? তারপর শুনলাম নেতানেত্রীদের চাপে কাউন্সিল পিছানো হলো। নিয়ে আসা হলো ১৫ জানুয়ারী। মনোয়নপত্র অনেকেই ক্রয় করলেন, কিন্তু কেউ জমা দিলেননা। কেন দিলেননা সেটার জবাব কে দিবে? প্রধান নির্বাচন কমিশনার মুহিদুর রহমান সাহেব? মুহিদুর রহমান সাহেব সুইট টকার, বন্ধু মানুষ, কিছু বলতে চাইনা তবে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব যখন তিনি নিলেন তখন তো তিনি কাউন্সিল অধিবেশন করে একটু সুষ্ঠ ব্যালট যুদ্ধের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করেই দলের মধ্যে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইয়ে দিবেন। না মুহিদুর রহমান সাহেব সেটি পারেননি, সেখানে তার ব্যর্থতা আছে কি-না আমি জানিনা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার যে সব বক্তব্য শুনেছি তাতে মনে হয়েছে তিনি অনেকটা অসহায়। কার কাছে তার এ অসহায়ত্ব? ঢাকার কাছে? না লন্ডনে তারেক রহমান সাহেবের কাছে? নাকি তারেক রহমান সাহেবের আশে পাশে যারা থাকেন তাদের কাছে? বিএনপির মত একটি দলের কাউন্সিল হবে সেখানে কেন এত লুকোচুরি? যুক্তরাজ্য বিএনপির যেখানে কাউন্সিল হয়েছে রয়েল রিজেন্সি, রয়েল রিজেন্সি থেকে লন্ডনের ওয়েষ্ট মিনিষ্টার হাউস অব পার্লামেন্টের দুরত্ব ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার। এই ৭/৮ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে সম্পর্ক কিন্তু ভালো ছিলনা। লন্ডনের হাউস অব পার্লামেন্টকে বলা হয় মাদার অব ডেমোক্রেসি। অনেকেই বলেন গণতন্ত্রের সুতিকাগার। আবার অনেকেই বলেন না। কেউ কেউ বলেন অডোক্রেসি কেউ বলেন ডেমোক্রেসির কোনোই প্রেক্টিস নাকি হয়না, অনেকের অনেক মত থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ধারণা হাউস অব পার্লমেন্ট হচ্ছে গণতন্ত্রের সুতিকাগার। আমি ধরে নিলাম এটি সত্য, কিন্তু এই সুতিকাগারের পাশেই বাংলাদেশের বড় একটি দলের যুক্তরাজ্য কমিটির কাউন্সিল অধিবেশন হচ্ছে অথচ সেখানে গণতন্ত্রের কোনোই চর্চা হচ্ছেনা বিষয়টি দলের নীতি-নির্ধারণী মহলকে কোনো ভাবে ভাবায় কি-না আমরা জানিনা। তবে আমার মত মিডিয়া কর্মীকে ভাবায়। আমার মত মিডিয়া কর্মী মনে করে যে দলটি একটি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দিনের পর দিন ছিল সেই দলে যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহেল দেশে গণতন্ত্র তারা কি করে প্রতিষ্ঠিত করবে?

বিএনপি যুক্তরাজ্য কমিটির নেতৃবৃন্দরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আসলে অনেক কিছুই বলেন, তারা শ্লোগান দেন, গণতন্ত্র হত্যাকারি নাকি শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। অথচ তাদের দলের কাউন্সিল অধিবেশন যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়নি সেটির জবাব তারা কি করে দিবেন? সেটির জবাব কার কাছে আমরা চাইবো? বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে? নাকি তারেক রহমান সাহেবের কাছে? নাকি মুহিদুর রহমান সাহেবের কাছে?

বিঃদ্রঃ এত কিছুর পরও ১৫ জানুয়ারীর কাউন্সিল অধিবেশন করায় তারেক রহমান সাহেবকে অভিনন্দন!!!??? অভিনন্দন বন্ধুবর মুহিদুর রহমান সাহেবকে যিনি নির্বাচন কমিশনারের মত গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু পালনই না তিনি তার কর্তব্য কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করেছেন। আমরা তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ!!!! এ কাউন্সিল একটি মাইল ফলক হিসেবে বাংলাদেশী রাজনীতির ইতিহাসে বিবেচিত হয়ে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস! ( লেখক সভাপতি  ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউরোপ )

লন্ডন ১৮/১/২০১৭ ইংরেজী


Spread the love

Leave a Reply