বিতর্ক: ‘ভিন্দালু ভিসা’ আছে ! ‘ভিন্দালু ভিসা’ নেই !

Spread the love

Image may contain: 1 person

ডক্টর এম মুজিবুর রহমান:

সাম্প্রতিক সময়ে ‘ভিন্দালু ভিসা’ নামে খ্যাত টি আর-২ এর অধীনে বৃটেনে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। নানারকম প্রশ্ন উঠছে। ‘ভিন্দালু ভিসা’ কি ? ভিন্দালু ভিসা’ কি ইস্যু করা শুরু হয়েছে? কারা এই ভিসার যোগ্য ? কি ধরণের প্রতিষ্ঠান এই ভিসার অধীনে দক্ষ কর্মী আনার সুযোগ পাবেন? এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণেই মূলতঃ ‘ভিন্দালু ভিসা’ নামে পরিচিত ভিসা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক কিংবা সন্দেহ-সংশয়ের সূত্রপাত। এছাড়া কোনো কোনো ইমিগ্রেশন আইনজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা কাঁদা ছুড়াছড়ি বা ভিন্নমত এই সন্দেহকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

প্রকৃত তথ্য হলো, টি আর-২ এর অধীনে ‘বৃটেনে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয়। এর আওতায় রেষ্টুরেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে দক্ষ কর্মী আনার সুযোগ পেতো। তবে কারী শিল্পের যেসব রেস্টুরেন্টগুলো ‘টেকওয়ে’ সরবরাহ করতো সে সব প্রতিষ্ঠানগুলো টি আর-২ এর অধীনে ‘বৃটেনে দক্ষ কর্মী আনার সুযোগ বন্দ্ব করে দেয়া হয়েছিল। ফলে দক্ষ কর্মী সংকটে অনেক ‘টেকওয়ে’ সরবরাহকারী রেষ্টুরেন্টগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। ফলে কারী শিল্পরক্ষায় টি আর-২ এর অধীনে ‘বৃটেনে দক্ষ কর্মী আনার সুযোগ চেয়ে কারী শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলো।অবশেষে সরকার তাদের এই দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। হোম সেক্রেটারী প্রীতি প্যাটেল টি আর-২ এর সংস্কার করেছেন। ‘টেকওয়ে’ সরবরাহকারী রেষ্টুরেন্টগুলোকেও টি আর-২ এর অধীনে দক্ষ কর্মী আনার সুযোগ দিয়েছেন।এটাকেই প্রতীকী অর্থে বলা হচ্ছে ‘ভিন্দালু ভিসা’ ।

কারী ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ভিন্দালু’ যেহেতু একটি পরিচিত নাম সেহেতু ‘টেকওয়ে’ সরবরাহকারী রেষ্টুরেন্টগুলো রক্ষায় হোম সেক্রেটারি প্রীতি প্যাটেল টি আর-২ এর অধীনে পরিবর্তিত এই সুযোগকে প্রতীকী অর্থে ‘ভিন্দালু ভিসা ‘হিসেবে অভিহিত করেছেন। ফলে ‘ ‘ভিন্দালু ভিসা’ নামে ভিসা ইস্যু করা না হলেও ‘টেকওয়ে’ সরবরাহকারী রেষ্টুরেন্টগুলো ইতোমধ্যেই টি আর-২ এর অধীনে ভিসা পেতে শুরু করেছে। অতএব ‘ভিন্দালু ভিসা’ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। আমার মনে হয়েছে টি আর-২ এর সংস্কার করে ‘টেকওয়ে’ সরবরাহকারী রেষ্টুরেন্টগুলোকে দক্ষ কর্মী আনার সুযোগ দেয়ার পরিবর্তিত নীতিমালা সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। তবে ‘ভিন্দালু ভিসা’ নাম নিয়েই বোধ হয় যতো বিতর্ক ও ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি । হ্যারিকেনের নাম ‘বুল্বুল’ না ‘আইলা ‘ তা দিয়ে কিছু যায় আসে না। এর প্রভাব কেমন সেটাই আসল কথা।

তাই টি আর -২ এর অধীনে ভিন্দালু ভিসাকে অন্য নামে অভিহিত করতে চাইলেও কিছু যায় আসে না। পরিবর্তিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রেস্টুরেন্ট মালিকরা কিভাবে দক্ষ কর্মী এনে এই শিল্পকে আরো গতিশীল ও লাভবান করতে পারেন সেটাই আসল বিষয় । আর ‘প্রতারণা’ আর ‘নিয়ম’ দুটি ভিন্ন বিষয়। যেকোনো বিষয়ে যে কেউ প্রতারণা করার চেষ্টা করলে আইনের কাঠগড়ায় তাকে দাঁড়াতে হবে।

ভিন্দালু ভিসাকে শাব্দিক অর্থ দিয়ে ব্যাখ্যা করলে তার আসল অর্থ বের করা সম্ভব নয়। ভিন্দালু ভিসাকে তার উদ্দেশ্য ও গুরুত্বের দৃষ্টি থেকে ব্যাখ্যা করতে হবে।

ব্রিটেনে কারি শিল্পে স্টাফ সংকট কাটাতে বিসিএ, ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস ও বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের ধারাবাহিক আন্দোলন ও লবির মাধ্যমে টি আর- ২ এর অধীনে রেস্টুরেন্টে দক্ষ কর্মী আনার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে তাকে প্রতীকী অর্থে ‘ভিন্দালু ভিসা’ নামে অভিহিত করে মূলত দুটি বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

এক হলো স্টাফ সংকট নিরসনের কারী শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্দোলন ও দাবির প্রতি স্বীকৃতি প্রদান করা। দ্বিতীয়ত স্বল্প পরিসরে হলেও টি আর -২ এর অধীনে শর্তাবলী পরিবর্তনের মাধ্যমে যে সুযোগ প্রদান করা হয়েছে তাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের দেশসমূহ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে । এতে করে কারী শিল্পে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসতে পারে । সবচেয়ে বড়ো বিষয় হলো পরিবর্তিত নিয়মের অধীনে সকল এথ্নিচিটির রেস্টুরেন্ট মালিকরা দক্ষ কর্মী আনতে পারবেন। তবে বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলো ‘ভিন্দালু’ নামে যে ‘কারী’ সরবরাহ করে আসছেন এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটকে সুপরিচিত ‘ভিন্দালু’ কারীর সাথে প্রতীকীভাবে সম্পৃক্ত করে কারী শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি এই শিল্পের গুরুত্বকে আবারো জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হলো।

যদিও স্টাফ সংকট দূর করাসহ কারী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরো কিছু পরিবর্তন আশু প্রয়োজন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে দক্ষ কর্মী আনার ক্ষেত্রে আরো কিছু সুযোগ সুবিধা আদায় করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্বভাবে কাজ করা জরুরি। বিশেষ করে বাৎসরিক বেতনের থ্রেশোল্ড কমানোর জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ব ও সমন্বিত উদ্যোগ।

পরিশেষে বলা যায়, টি আর -২ এর পরিবর্তিত নিয়মে হয়তো কারী শিল্পের সমস্যা শেষ হয়ে যায় নাই এ কথা জেম সত্য, ঠিক তেমনি এই পরিবর্তিত নিয়মের মাধ্যমে কিছুটা হলেও সুযোগতো সৃষ্টি হয়েছে। কারো ক্ষতি নিশ্চয় হয় নাই। এখানে কেউতো কিছু হারাচ্ছেন না। কারী শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আরো ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানোর জন্য দাবি চালিয়ে যেতে আপত্তি থাকার প্রশ্নই উঠে না । তাই পরিবর্তিত সুযোগকে বিতর্কিত না করে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ। সকলের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে একটি অনুরোধ রাখবো, কোনো কারণে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হলে আমাদের কয়েক জেনারেশনের পরিশমের ফসল কারী শিল্পকে আরো আধুনিকায়ন ও ঠিকিয়ে রাখার স্বার্থে একে অন্যকে হেয় করার চিন্তা পরিহার করে একসাথে বসে ভুল বুঝাবুঝির অবসান করা জরুরি। ( লেখকঃ সাবেক অধ্যাপক, শাবিপ্রবি ,সিলেট )


Spread the love

Leave a Reply